মেহগিনি মনের কোনে জমে থাকা চাওয়া ,অভিলাশ,আকাঙ্ক্ষা, অপ্রাপ্তি গুলো রাত্রি হলে অজস্র কুণ্ঠার হাত ছারিয়ে যখন ধির পায়ে আমার কাছে এসে দাঁড়ায়, তখন আমার প্রাপ্তি গুলো আমার গলা জরিয়ে অঘোর ঘুমে কাত! আমি শুধু ফিরে চাই অপ্রাপ্তির মুখের দিকে, আর স্ফিত হাঁসিতে বলি-সব উত্তর তোমায় লিখে জানাবো কবিতায়! তারা বাধ্য দাসানুদাসের মত ঘাড় হেলিয়ে মিলিয়ে যায় রাতের অন্ধকারে,আর আমি একটা দীর্ঘ শ্বাস ছারি......
লালচে টেবিল ল্যাম্পটার সামনে যে বেলজিয়াম কাঁচের আয়নাটা আছে সেটাই শুধু আমায় অসীম ক্ষমায় অনুকম্পায় এক অনাঘ্রাত প্রতিবিম্বের যোগ্য বলে মনে করে,যে নিঃশব্দ এলসিডি টা আঁধার কালো ঘরে আলোআঁধারির জলতরঙ্গে আমার নীরব অনুভুতির,অভিব্যাক্তির অনুভব কে চিনতে পারে অচিরে, অক্লেশে সেটাই শুধু আমার সমব্যাথি!পায়ের নীচের যে গালিচা আমার দুই পা চেপে না ধরে দোহাই না দিয়ে আমায় প্রশ্রয় দেয় জীবনের ভাঙা গড়ার খেলায় এগিয়ে যেতে, সেই গালিচা কেই আমার চাঁদোয়া করতে কোন দ্বিধা নেই দন্ধ নেই...এটা জেনে রাখিস আমি একটা মানুষ, যে জীবন টাকে রোগে নয় ভোগ করতে চাই রাখালিয়া বাঁশির মত, জীবনটাকে গায়ে মাখতে চাই যেমন ভাবে ধুলো মাখে গায়ে বাউলিয়ারা খোয়াইয়ের পথে...
কোন অশান্ত রাতে যখন মুহুর্ত কে থেমে যেতে দেখি,ঘরের রজনিগন্ধার গন্ধ আর বারান্দায় গাঁজার গন্ধকে ছাপিয়ে তোর পারফিউমের গন্ধ আমায় ছরিয়ে দেয় সারা কোলকাতায় নির্নিমেষ, তখন বাইপাশ দিয়ে ছুটে চলা গাড়ি, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে দাঁড়িয়ে থাকা নারী, কেউ ই আমায় আকর্ষণ করতে পারেনা দুদণ্ড থামাবার দুঃসাহসে! আমি ছুটে চলি দেশ কালের নাগালের বাইরে এক স্বপ্ন ময়তায়...! তোর ঘামে ভেজা পিঠ যখন চোখের সামনে ভাসে, মনের ক্যানভাসে তখন সদ্য রং ছুঁয়েছে সোহাগ ! আমার গলায় দলা পাকায় যে আবেগ, যে না বলা কথাগুলো শুকোয় ব্যাক্তিত্বের রোদ্দুরে তাকে কিভাবে কোন মৃত সঞ্জীবনী সুধায় টাটকা করে তুলবো তা ভাবতে ভাবতেই সময় ছুঁয়ে যায় বাস্তব কে... সূর্য হেলে পড়ে... চাঁদ হারিয়ে যায় তার কলঙ্কিত প্রেম কে নিয়ে সামাজিক আলোর ভীরে...
কোন সৌজন্যের খাতিরে আমি আমার ভিতরের বন্য প্রেমকে জঘন্য বলতে নারাজ, তাতে যাই বলিস তুই আমি অসামাজিক! তাতে যাই ভাবিস তুই আমি অসভ্য জংলী ইতর বর্বর! ভালোবাসার কবিতায় কলম ছুঁইয়েছি বলে গরু কে ফুল ছুঁড়ে মারার পক্ষপাত দুষ্ট পুরুষ যদি আমায় ভাবিস তবে জানবি,তুই মূর্খের স্বর্গে বাস করছিস! আমার কৌলীন্য যদি অভিশাপ হয়ে থাকে,আমার আরাধ্য প্রেম যদি অবাংমনসোগোচর হয়,আমার পাণ্ডিত্যের মেঘ যদি আমায় উন্নিত করে সেইখানে যেখান থেকে আমি স্বাচ্ছন্দের অভিসারে প্রিয়তম নয়, শ্রদ্ধেয় সম্বোধনের উপযুক্ত হই, তবে আমি ব্রাত্য হতে রাজি,আমি বেশ্যা হতে রাজি, আমি মূর্খ হতে রাজি...কারন আমি চাই না এমন স্বর্গীয় প্রেম যা আমায় অনন্ত বিরহীর সাথে এক বেদিতে দাঁড় করাবে আসামীর মত...
আমার ব্লেণ্ডেড হুইস্কি খেতে ভালো লাগে কিন্তু ভালোলাগাটা আরও বাড়ে যখন গ্লাসটা হয় মনের মত চওরা পেটি ওয়ালা ,বেঁটে, পাতলা কাঁচের,...আর আসরের সঙ্গীরা হয় সঙ্গতার গণ্ডী ছারিয়ে অসঙ্গতির মুখশুদ্ধিতে নিঃসঙ্গতার দোসর!ডিম লাইট জ্বলা ঘরে তখন নেশা চরে, পেটের ভিতরে চিরিবির করতে থাকে মদ আর ঠোঁট দুটো চুম্বন হীনতায় বিড়বিড় করতে করতে বলে চলে-
আমার প্রেম ছিলো সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের মতো,
তুমি চেয়েছিলে কবিতাপ্রধান প্রেম ।
তাই, বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে
লঘু হয়ে আসা নিম্নচাপ যেরকম
শান্তরূপে অতিক্রম করে উপকূল-
তেমনি কোনো ধ্বংসযজ্ঞ ছাড়াই
আমার প্রেম অতিক্রম করেছে তোমাকে ।
তা না হলে প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ের মতো চোখের পলকে
সে তছনছ করে দিতে পারতো
তোমার সাজানো সংসার, গাছপালা, ঘরবাড়ি ।
সে পারতো তোমাকে চিত্রল হরিণীর মতো
গভীর গভীরতর সমুদ্রে ভাসিয়ে নিতে-
যেখানে চিত্রল হরিনীর সাথে চূড়ান্ত সঙ্গমে মাতে
ডোরাকাটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার ।
শুধু তোমার জন্য, শুধু তোমার কথা ভেবে,
সমুদ্রের নাভি থেকে জাগ্রত আমার অশান্ত প্রেমকে
আমি শান্ত সন্তের মতো তোমার সন্ত্রস্ত উপকূল
অতিক্রম করতে বলেছি ।
তোমাকে সে প্রদক্ষিণ করেছে, হজ্বযাত্রীরা যে রকম
শান্ত নগ্ন পায়ে প্রদক্ষিণ করে পবিত্র কাবাঘর ।
তোমার জন্য প্রেমকে আমি পরিণত করেছি কবিতায় ।
তাতে লাভ হয়েছে পাঠকের এবং তোমার ।
কিন্তু তার জন্য আমাকে কি করতে হয়েছে, জানো ?
এপ্রিলের সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের মতো
তোমার উপকূলের দিকে ছুটে-যাওয়া
আমার আবেগের ঢেউগুলোকে পুনরায় মধ্যসমুদ্রের দিকে
ফেরত পাঠাতে গিয়ে আমি রত্নাকর দস্যুর গায়ে
পরিয়েছি বাল্মীকির বেশ ।
তুমি তোমার দুরন্ত ছেলেটির গায়ের
জামা বদল করার সময় নিশ্চয়ই বুঝবে,
কাজটা কবিতা লিখার মতো সহজ ছিল না ।
(*কবি -নির্মলেন্দু গুন এর সামুদ্রিক প্রেম)
জয় গুরু ...
শুভ রাত্রি......
No comments:
Post a Comment